জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত: ঘরোয়া উপায়ে সুস্থতা
জ্বর হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এই সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাবার গ্রহণ করলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। আসুন জেনে নিই জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত।
পর্যাপ্ত পানি পান
জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত, আমরা জানতে চাই। জ্বর হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি ছাড়াও ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি পান করা যেতে পারে। এগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
হালকা ও সহজপাচ্য খাবার:
জ্বর হলে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। যেমন:
- খিচুড়ি: এটি সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর।
- স্যুপ: চিকেন স্যুপ বা সবজি স্যুপ খাওয়া যেতে পারে।
- ফল: পাকা কলা, আপেল, পেয়ারা ইত্যাদি ফল খাওয়া যেতে পারে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
প্রোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই জ্বর হলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
জ্বরে কোন কোন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে?
- ডাল: মসুর ডাল, মুগ ডাল, চনা ডাল ইত্যাদি। ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং এটি হজমে সহজ।
- ডিম: সেদ্ধ ডিম বা অমলেট খাওয়া যেতে পারে। ডিমে উচ্চমানের প্রোটিন থাকে।
- মাছ: হালকা ভাজা বা সেদ্ধ মাছ খাওয়া যেতে পারে। মাছে প্রোটিনের পাশাপাশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারী।
- দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ, দই, পনির ইত্যাদিতে প্রোটিন থাকে।
- মাংস: চিকেন, টার্কি ইত্যাদি হালকা করে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।
- বাদাম: বাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। বাদাম, কাজুবাদাম, বাদাম ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
কেন জ্বরে প্রোটিন খাওয়া উচিত?
- কোষ মেরামত: জ্বরের সময় শরীরের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রোটিন এই ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: প্রোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যাতে আপনি দ্রুত সুস্থ হতে পারেন।
- দুর্বলতা দূর করতে: জ্বরের পরে অনেক সময় শরীরে দুর্বলতা অনুভূত হয়। প্রোটিন এই দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।
- নতুন কোষ তৈরি: প্রোটিন শরীরে নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে, যা সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার:
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।। তাই জ্বর হলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
জ্বর হলে কিছু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার হল:
- লেবু: লেবুর রস বা লেবু পানি পান করলে শরীরে ভিটামিন সি সরবরাহ হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। লেবুর রসে ভিটামিন সি ছাড়াও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী।
- কমলা: কমলার রস বা পুরো কমলা খেলেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। কমলায় ভিটামিন সি ছাড়াও ফোলেট, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে।
- আমলকি: আমলকি ভিটামিন সির একটি খুব ভালো উৎস। আমলকি রস, আমলকি চূর্ণ বা পুরো আমলকি খেতে পারেন। আমলকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বকের জন্যও উপকারী।
অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার:
- স্ট্রবেরি
- কিউই
- কালো কিসমিশ
- ব্রোকলি
- পালং শাক
মনে রাখবেন:
- জ্বর হলে শুধু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াই যথেষ্ট নয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
- জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
জ্বর হলে এড়িয়ে চলা উচিত খাবার
জ্বর হলে শরীরকে সুস্থ করার জন্য কিছু খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। নিম্নলিখিত খাবারগুলো জ্বরের সময় খাওয়া উচিত নয়:
- মসলাযুক্ত খাবার: মসলাযুক্ত খাবার হজমে সমস্যা করতে পারে এবং জ্বরকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি বা বমি হতে পারে।
- তেলযুক্ত খাবার: তেলযুক্ত খাবার হজম করতে শরীরকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এতে পেট ফাঁপা, বমিভাব এবং অন্যান্য হজম সম্পর্কিত সমস্যা হতে পারে।
- কোল্ড ড্রিঙ্কস: কোল্ড ড্রিঙ্কস গলাকে আরও শুষ্ক করে দিতে পারে এবং গলা ব্যথা বা কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, এতে থাকা ক্যাফেইন শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি করতে পারে।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাত খাবারে সাধারণত অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং রাসায়নিক থাকে যা জ্বরের সময় শরীরের জন্য উপকারী নয়।
- দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য খেলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং জ্বর আরও খারাপ হতে পারে।
কেন এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
- হজমে সমস্যা: মসলাযুক্ত ও তেলযুক্ত খাবার হজম করতে শরীরকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এতে পেটে ব্যথা, বমিভাব, ডায়রিয়া ইত্যাদি হতে পারে।
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: কিছু খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে যা জ্বরের সময় ক্ষতিকর।
- দেহের পানি শূন্যতা: কোল্ড ড্রিঙ্কস শরীর থেকে পানি বের করে দেয় যা জ্বরের সময় শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম
খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিশ্রাম নিলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
হালকা খাবার: জ্বরের সময় ভারী খাবার খাওয়া উচিত নয়। হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়া উচিত।
তরল খাবার: জ্বরের সময় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি পান করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ: জ্বরের সময় কোন খাবার খাওয়া উচিত, তা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যদি জ্বর অনেক বেড়ে যায় কিংবা অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তালিকাঃ
1.
Prof. Dr. S. M. Rokonuzzaman | Professor & Head of Department
For Appointment:
https://www.uchbd.com/doctor/20
2.
Prof. Dr. H A M Nazmul Ahasan | Professor of Medicine, Popular Medical College, Dhaka.
For Appointment:
https://populardiagnostic.com/our-doctor-profile/2100/prof-dr-h-a-m-nazmul-ahasan