Doctor In Bangladesh

doctor info site in bangladesh

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি? আসুন ঘরোয়া চিকিৎসা জেনে নেই

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি?

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা, যা জীবাণু সংক্রমণ, খাদ্যে বিষক্রিয়া, বা হজমের সমস্যার কারণে হতে পারে। এই ধরনের সমস্যার জন্য ডাক্তারি চিকিৎসা প্রয়োজনীয় হলেও ঘরোয়া কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাৎক্ষণিক আরাম পেতে পারেন। এখানে পাতলা পায়খানা হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।



পাতলা পায়খানার কারণ লক্ষণ

পাতলা পায়খানা হতে পারে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে। এছাড়াও খাবারে অস্বাস্থ্যকর পানি, অতিরিক্ত তেল-মসলা যুক্ত খাবার, মানসিক চাপ ইত্যাদিও এর কারণ হতে পারে। পাতলা পায়খানার ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে।


করণীয়: ঘরোয়া চিকিৎসা

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় প্রথম পদক্ষেপ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া। ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তাই শরীরের পানির মাত্রা ঠিক রাখতে জল, ওআরএস বা অন্য হাইড্রেটিং ড্রিঙ্কস পান করা জরুরি।


  1. ওআরএস বা লবণচিনি মিশ্রণ
    ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পেতে ওআরএস খাওয়া অত্যন্ত কার্যকরী। ঘরে সহজেই ওআরএস তৈরি করতে পারেন। এক লিটার বিশুদ্ধ পানিতে আধা চা-চামচ লবণ ও চার চা-চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর এটি পান করলে শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় থাকে।
  2. দই বা প্রোবায়োটিকস
    দইয়ের মধ্যে প্রোবায়োটিকস থাকে, যা হজমের জন্য খুবই উপকারী। এটি অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে, যা দ্রুত পেটের সমস্যার সমাধান করতে সহায়ক। দিনে দু’বার এক কাপ দই খেতে পারেন।
  3. কলা
    কলা একটি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর ফল, যা পাতলা পায়খানার চিকিৎসায় সহায়ক। এতে পটাসিয়াম থাকে যা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং পায়খানা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  4. মেথি বীজ
    মেথি বীজের মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে, যা পেটের ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। এক চা-চামচ মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন এবং সকালে খালি পেটে খেয়ে ফেলুন।
  5. ভাতের মাড়
    পাতলা পায়খানা হলে করণীয় আরেকটি কার্যকরী ব্যবস্থা হলো ভাতের মাড়। এটি অন্ত্রের মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং সহজপাচ্য। পাতলা পায়খানা শুরু হলে দিনে ২-৩ বার ভাতের মাড় খেলে দ্রুত আরাম পাওয়া সম্ভব।


পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের পরামর্শ

পাতলা পায়খানা হলে খাদ্যের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। ভারী ও তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। নিচে কিছু খাবার পরামর্শ দেওয়া হলো।

  • পানি ফলের রস: লেবুর শরবত বা আপেলের রস পান করতে পারেন। এগুলো শরীরে পানির মাত্রা বাড়ায়।
  • বেশি আঁশযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা: অধিক আঁশযুক্ত খাবার পাতলা পায়খানার সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই সাময়িকভাবে কম আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
  • মুরগির মাংসের স্যুপ: এতে প্রোটিন ও ইলেক্ট্রোলাইটের পরিমাণ বেশি থাকে যা শরীরে পুষ্টি যোগায়।


ঘরোয়া চিকিৎসার সতর্কতা পরামর্শ

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় যে কোনো ঘরোয়া চিকিৎসা করার সময় কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। যেমন:

  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: অতিরিক্ত কাজ বা পরিশ্রম শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অতিরিক্ত মসলা বা তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: হজমে সমস্যাজনিত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
  • প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখান: যদি পাতলা পায়খানা কয়েকদিন ধরে চলে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা মেনে চলা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে কোনো সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। দ্রুত আরোগ্যের জন্য ঘরোয়া কিছু প্রতিকার যেমন দই, কলা, ওআরএস ইত্যাদি অনুসরণ করতে পারেন।

এছাড়াও শরীরের পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখতে ও পানি শূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। স্মরণে রাখবেন, সুস্থ থাকা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঘরোয়া কিছু অভ্যাস কার্যকরী হলেও, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়াই সঠিক পথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *